ইনস্টিটিউট সম্পর্কিত

প্রাক কথন

দেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও পেশাদার ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। গণপ্রজাতন্তী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীণ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন উত্তরাঞ্চলের যমুনা এবং চলনবিল বিধৌত সিরাজগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মধ্যম স্তরের প্রকৌশল শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ জেলায় সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর মহাসড়কে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী মৌজায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ২.০০ একর জায়গার উপর সিরাজগঞ্জ জেলায় তথা এতদ্‌ঞ্চলের দেশ গড়ার কারিগরি খ্যাত মধ্যম স্তরের প্রকৌশলী তৈরীর একমাত্র সরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট” অবস্থিত। সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ২০০৪ সনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার যাত্রা শুরু করে । শুরুতে ০১টি টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স নিয়ে এতদ্‌ঞ্চলে মধ্যম স্তরের প্রকৌশলী তৈরীর কাজ শুরু করলেও বর্তমানে ০৫টি টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে, কোর্স গুলো যথাক্রমে কম্পিউটার সায়েন্স টেকনোলজী, সিভিল টেকনোলজী , ইলেট্রিকাল টেকনোলজী , ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি , রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং টেকনোলজি

কর্তৃত্ব

সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দেশের অন্য ৪৮টি পলিটেকনিক ও মনোটেকনিকের মতোই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন, যার কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান প্রনয়ন, নিয়ন্ত্রন, মূল্যায়ন ও উন্নয়ন–এর সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপর ন্যস্ত।

কার্যক্রম

৪ বছর মেয়াদী “ডিপ্লোমা–ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স”:

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রণিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৫টি টেকনোলজিতে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা–ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। টেকনোলজিগুলো হলো–

* কম্পিউটার সায়েন্স টেকনোলজী

* সিভিল টেকনোলজী

* ইলেট্রিকাল টেকনোলজী

* ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি

* রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং টেকনোলজি

চার বছরের এই শিক্ষা কোর্সে মোট আটটি সেমিষ্টার রয়েছে যার মধ্যে ছয় মাস মেয়াদী এক সেমিষ্টারের একটি “ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এ্যাটাচমেন্ট ট্রেনিং” রয়েছে যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করতে হয়। বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিধি অনুযায়ী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রেনিংসহ আট সেমিষ্টারের এই কোর্স শেষ করলে তাকে নির্দিষ্ট টেকনোলজির “ডিপ্লোমা–ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং” সনদ প্রদান করা হয়। ২০২১–২০২২ শিক্ষাবর্ষ হতে কারিগরি শিক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গের এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৫টি টেকনোলজিতে মোট আসন সংখ্যা প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৬০০জন।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী

বর্তমানে মোট ১২১ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। শিক্ষকমন্ডলীর সকলেই যেমন শিক্ষাজীবনে উজ্জ্বল কৃতিত্বের অধিকারী তেমন শিক্ষকতায় নিবেদিতপ্রাণ, পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান। শ্রেণীকক্ষ সহ শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা নিরসনে তারা অত্যন্ত আন্তরিক ও যত্নবান।

খেলার মাঠ

ইনস্টিটিউটে কোন আলাদা খেলার মাঠ নেই। তবে, মূল ভবন চারটির মাঝে প্রায় ১০০০০ বর্গফুটের একটি খোলা স্থান খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মাঠে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ফুটবল, ক্রিকেট সহ ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ও অন্যান্য বহিঃকক্ষ খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।

লাইব্রেরী

সাম্প্রতিক তথ্য সম্বলিত পাঠ্য ও রেফারেন্স উপকরণ নিয়ে গড়া একটি লাইব্রেরী রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। বর্তমান প্রযুক্তি ও শিক্ষা সহায়ক জার্নাল সহ পাঠ্য ও রেফারেন্স বইগুলো ছাত্রীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যবহার করতে পারে। ইনস্টিটিউট খোলা থাকাকালীন সময়ে এখানে বসে পড়াশোনা করা যায়। একসাথে প্রায় ৪০ জন এখানে বসে পড়তে পারে। বর্তমানে এই লাইবেরীর সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ১৫০০। ২০১৯ সালে এখানে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধ কর্ণার (সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ২০০)।

শিক্ষার্থীদের কমন রুম

কমন রুমের আদলে এই প্রতিষ্ঠানে একটি মাল্টি পারপাস রুম রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের অবসরে সংবাদপত্র ও পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি অন্তকক্ষ খেলাধুলা (ক্যারাম, টেবিল টেনিস, দাবা ইত্যাদি) করে থাকে।

শিক্ষা সফর

শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষার সকল প্রকার আয়োজন এই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত করা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সাথে মেধা ও মননের বিকাশের পাশাপাশি সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সফরের আয়োজন করে।

উচ্চ শিক্ষার সুযোগ

ডিপ্লোমা পাশ করার পর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে ১ বছরের ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন কোর্স করতে পারেন। এছাড়াও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাশ কোর্সে ডিগ্রী পড়তে পারেন। দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার প্রচুর সুযোগ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণের রয়েছে।

কর্মক্ষেত্র

 ডিপ্লোমা–ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর মর্যাদাপূর্ণ চাকুরী অথবা পছন্দমত ব্যবসা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ডিপ্লোমা কোর্সের একাডেমিক স্বীকৃতি বহিঃবিশ্বে রয়েছে বিধায় একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বিদেশে সাধারণ শ্রমিক নয়, মধ্যম শ্রেণীর প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। ২য় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে শুরুতেই চাকুরীতে যোগদান এবং পদোন্নতি পেয়ে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হবার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, টি এন্ড টি, টেলিভিশন, বেতার, আনবিক শক্তি কমিশন, আবহাওয়া অধিদপ্তর, ভকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজে কারিগরি বিষয়ে শিক্ষক এবং বিভিন্ন প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সহ অন্যান্য চাকুরী, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিপিং কর্পোরেশন, বিমান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, আধুনিক সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে